আলীনূর সাহেব একটি বড় পোশাক কারখানার মালিক। তার কারখানায় উৎপাদিত পণ্যসামগ্রী প্রতিনিয়ত বিদেশে রপ্তানি করা হয়।
রাউফুল সাহেব অস্ট্রেলিয়ায় চাকরি করেন। তিনি প্রতিমাসে তার স্ত্রীকে টাকা পাঠালে তার স্ত্রী মাসিক খরচের অতিরিক্ত টাকা একটি আর্থিক প্রতিষ্ঠানে জমা রাখেন। এ আর্থিক প্রতিষ্ঠানটি তার স্ত্রীকে নির্দিষ্ট পরিমাণে সুদও প্রদান করে।
বাংলাদেশের মানুষের জানমালের নিরাপত্তা বিধান, দেশরক্ষা, প্রশাসন পরিচালনা, অর্থনৈতিক উন্নয়ন কর্মকাণ্ড জনকল্যাণমূলক কাজে বাংলাদেশ সরকারের রয়েছে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা। সরকার এ ভূমিকা পালনে বিপুল পরিমাণ করে। এ ব্যয় মেটাতে বাংলাদেশ সরকার কখনো কখনো করের হার বৃদ্ধি করে নতুন ক্ষেত্রে কর আরোপ করে এবং কর বহির্ভূত আয়ের ব্যবস্থাও করে। বাংলাদেশ সরকার সাধীনতা-পরবর্তী সময়ে গড়ে তুলেছে প্রশাসন, অর্থ, সাস্থ্য, শিক্ষা, ব্যাংকসহ বহু ক্ষেত্রভিত্তিক ব্যবস্থাপনা। অর্থ ব্যবস্থা ও ব্যাংক ব্যবস্থা বাংলাদেশ সরকারের বৃহত্তম দুটি ব্যবস্থাপনা। সময়ের পরিবর্তনের সাথে এ দুটি ব্যবস্থার কার্যাবলি পূর্বের তুলনায় বহুগুণে বৃদ্ধি পেয়েছে। জনসাধারণ তাদের আয় বা উদ্বৃত্ত অর্থ নিরাপদে সঞ্চয়ের জন্য ব্যাংকে জমা রাখে। সময়ের পরিবর্তনে বাংলাদেশ সরকার এ লক্ষ্যে গড়ে তুলেছে কেন্দ্রীয়, বাণিজ্যিক ব্যাংকসহ বিশেষ কতকগুলো আর্থিক প্রতিষ্ঠান। এ অধ্যায়ে আমরা বাংলাদেশ সরকারের আয়ের উৎস, বায়ের খাত ও ব্যাংক ব্যবস্থাপনা সম্পর্কে অবগত হব।
সরকারি অর্থ ব্যবস্থা হলো অর্থনীতির অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ শাখা। সাধারণভাবে সরকারি অর্থ ব্যবস্থা বলতে রাষ্ট্রের আয় ও ব্যয় সক্রান্ত নীতি ও পদ্ধতিকে বুঝায়। এ সম্পর্কে অধ্যাপক ডালটন বলেন, 'সরকারি অর্থব্যবস্থা সরকারের আয়-ব্যয় এবং এদের একটির সঙ্গে অপরটির সমন্বয় বিধানের কার্যাবলি আলোচনা করে। অর্থনীতির এ শাখায় রাষ্ট্রের সব ধরনের আয়-ব্যয়, ঋণ ও বিনিয়োগ সংক্রান্ত সমস্যা ও সেসবের সমাধানের বিষয় অন্তর্ভুক্ত থাকে।
বাংলাদেশ সরকারের আয়ের উৎস
বাংলাদেশ সরকার জনকল্যাণ সাধন, প্রশাসন পরিচালনা ও আর্থ-সামাজিক উন্নয়নের জন্য বিপুল পরিমাণ অর্থ ব্যয় করে। এ ব্যয় নির্বাহের জন্য সরকারকে প্রচুর অর্থ আয় করতে হয়। বাংলাদেশ সরকারের আয়ের উৎসগুলোকে দু'ভাগে ভাগ করা যায়, যথা: ক. কর রাজস্ব ও খ. কর বহির্ভূত রাজত্ব। নিচে বাংলাদেশ সরকারের আয়ের উৎসগুলোর বিবরণ দেওয়া হলো। কর রাজস্ব বাংলাদেশ সরকার দেশের জনগণ, বিভিন্ন ব্যবসায় ও শিল্প কারখানার ওপর যে কর ধার্য করে তাথেকে প্রাপ্ত জায়কে কর রাজস্ব বলে।
বাংলাদেশ সরকারের কর রাজস্ব আয়ের উৎসসমূহ নিম্নরূপ :
১. বাণিজ্য শুষ্ক : বাংলাদেশ সরকারের আয়ের প্রধান উৎস হলো বাণিজ্য শুল্ক। দেশের আমদানি ও রপ্তানিকৃত দ্রব্যের ওপর যে কর ধার্য করা হয় তাকে বাণিজ্য শুল্ক বলা হয়।
২. আবগারি শুল্ক : দেশের অভ্যন্তরে উৎপাদিত ও ব্যবহৃত দ্রব্যের ওপর যে কর ধার্য করা হয় তাকে আবগারি শুষ্ক বলা হয়। রাজস্ব সংগ্রহ ছাড়াও বিভিন্ন ক্ষতিকর দ্রব্যের ভোগ হ্রাস করার উদ্দেশ্যে আবগারি শুল্ক ধার্য করা হয়। বাংলাদেশে প্রধানত চা, সিগারেট, চিনি, তামাক, কেরোসিন, ওষুধ, স্পিরিট দিয়াশলাই, গাঁজা, আফিম প্রভৃতি প্রব্যের ওপর আবগারি শুল্ক ধার্য করা হয়।
৩. আয়কর বাংলাদেশ সরকারের আয়ের এটি গুরুত্বপূর্ণ উৎস আয়কর। জনসাধারণের ব্যক্তিগত আয়ের ওপর যে কর ধার্য করা হয় তাকে আয়কর বলা হয়। যাদের আয় একটি নির্দিষ্ট সীমার ঊর্ধ্বে তাদের নিকট থেকে প্রগতিশীল (Progressive) হারে আয়কর আদায় করা হয়।
৪. মূল্য সংযোজন কর মূল্য সংযোজন কর বাংলাদেশে কর ব্যবস্থায় ভ্যাট (Value Added Tax) নামে পরিচিত। বর্তমানে আমাদের দেশে আমদানিকৃত দ্রব্য ও স্থানীয়ভাবে উৎপাদিত দ্রব্য এবং নির্ধারিত কতকগুলো সেবা খাতের ওপর ভ্যাট আরোপ করা হয়েছে।
৫. সম্পূরক শুল্ক অনেক দ্রব্যসামগ্রীর ওপর আমদানি শুল্ক বা আবগারি শুল্ক বা ভ্যাট আরোপের পরও অতিরিক্ত যে শুল্ক আরোপ করা হয়, তাকে সম্পূরক শুল্ক বলা হয়। এটি বাংলাদেশ সরকারের আয়ের অন্যতম প্রধান উৎস।
৬. ভূমি রাজস্ব ভূমি ভোগ দখলের জন্য সরকারকে প্রদত্ত খাজনাই ভূমি রাজস্ব নামে পরিচিত। সরকার ২৫ বিধা পর্যন্ত জমির খাজনা মওকুফ করার ফলে এ খাতে সরকারের আয় কিছুটা কম।
৭. নন-জুডিসিয়াল স্ট্যাম্প বিভিন্ন দলিলপত্র ও মামলা মকদ্দমার আবেদনপত্র ব্যবহারের জন্য স্ট্যাম্প, পাসপোর্ট, বিনিময় বিল ইত্যাদি খাতে সরকার প্রচুর অর্থ উপার্জন করে।
৮. রেজিস্ট্রেশন : দলিলপত্র রেজিস্ট্রি বা নিকখন করার জন্য রেজিস্ট্রেশন ফি এবং মামলা মকদ্দমার জন্য কোর্টফি প্রদান করতে হয়। এতেও সরকারের যথেষ্ট আয় হয়।
৯. যানবাহন কর বিভিন্ন প্রকার যানবাহন নিবন্ধনের জন্য প্রদত্ত করকে যানবাহন কর বলে।
১০. মাদক শুষ্ক : সরকার মদ, গাঁজা, আফিম ইত্যাদি মাদক দ্রব্যের ওপর শুল্ক বসিয়ে কিছু আয় করে।
১১. বিদ্যুৎ শুষ্ক। বিদ্যুতের ওপর আরোপিত শুল্ক থেকেও সরকারের আয় হয়।
১২. অন্যান্য কর ও শুল্ক উপরে বর্ণিত শুষ্ক ও কর ছাড়াও আরও কিছু কর ও শুল্ক থেকে সরকার আয় করে। এর মধ্যে রয়েছে আমোদ প্রমোদ কর, সম্পত্তি কর, পেট্রোল ও গ্যাসের ওপর শুষ্ক, বিদেশ ভ্রমণের ওপর -শুষ্ক, সেচ কাজ ও যন্ত্রপাতির ওপর কর ইত্যাদি প্রধান।
কর বহির্ভূত রাজস্ব বাংলাদেশ সরকার কর ও শুল্ক ছাড়াও আরও অনেক উৎস হতে রাজস্ব সংগ্রহ করে। এ উৎসগুলো থেকে অর্জিত রাজস্বকে কর বহির্ভূত রাজ্য বলে। নিম্নে এসব উৎসসমূহ আলোচনা করা হহলোঃ
কর-বহির্ভূত রাজস্ব
১. লভ্যাংশ ও মুনাফা সরকার বিভিন্ন আর্থিক প্রতিষ্ঠান, একক সরকারি আয়ের উৎস সম্প্রসারিত করার যেমন- ব্যাংক, বিমা কোম্পানি, অ-আর্থিক প্রতিষ্ঠান উপায় উল্লেখ কর। (Non-financial institution), পার্ক, চিড়িয়াখানা প্রভৃতি থেকে বছর শেষে লভ্যাংশ ও মুনাফা পেয়ে থাকে।
২. সুদ সরকার বিভিন্ন আর্থিক ও স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠানকে ঋণ দিয়ে থাকে। এ বাবদ প্রাপ্ত শুল্ক থেকে কিছু আয় হয়।
৩. অর্থনৈতিক সেবা: সরকার জনসাধারণকে কিছু অর্থনৈতিক সুবিধা প্রদানের মাধ্যমেও আয় করে। এগুলোরমধ্যে পর্যটন, ব্যাংকিং, ভ্রমণ ও সেবা উল্লেখযোগ্য। আমদানি-রপ্তানি আইনের আওতায় প্রাপ্ত রেজিস্ট্রেশন স্কিম, বিমা আইনের আওতায় প্রাপ্তি এবং সমবায় সমিতিসমূহের অডিট স্কিম, সমবায় সমিতি রেজিস্ট্রেশন ও নবায়ন স্কিম প্রভৃতিও কর বহির্ভূত রাজস্ব আয়।
৪. সাধারণ প্রশাসন : বাংলাদেশ সরকার প্রশাসনিক সেবা প্রদানের জন্য বিভিন্ন প্রকার "ফি" আলায় করে।
৫. রেলওয়ে : রেলওয়ে সরকারি আয়ের একটি উৎস। তবে সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনা নিশ্চিত হলে এ খাত থেকে অধিকতর আয় সম্ভব।
৬. ডাক বিভাগ : দেশের ডাক বিভাগ সরকার কর্তৃক পরিচালিত হয় বিধায় এটিও সরকারি আয়ের অন্যতম উৎস।
৭. তার ও টেলিফোন তার ও টেলিফোন ব্যবস্থা সরকার কর্তৃক পরিচালিত হয় বিধায় এটি সরকারের আয়ের আরও একটি উৎস।
৮. বন বন থেকেও সরকার প্রচুর অর্থ আয় করে থাকে। বাংলাদেশের বনাঞ্চল থেকে কাঠ, বাঁশ, জ্বালানি, মধু, মোম ইত্যাদি বনজ সম্পদ বিক্রয়ের মাধ্যমে সরকার আয় করে।
৯. টোল ও লেভি টোল ও লেভির মাধ্যমে সরকার উল্লেখযোগ্য পরিমাণ অর্থ আয় করে। টোল হলো- একধরনের রাজস্ব আয় যা আয়ের ওপর নির্ধারিত আয়করের মতো নয়। সরকার জনগণের সেবা বাবদ বিভিন্নভাবে এ কর গ্রহণ করে, যেমন: ব্রিজ, সেতু, কার্লভাট, ঘাট, পারাপার, হাট-বাজার প্রভৃতি থেকে সরকার অর্থ আদায় করে যা টোল হিসেবে পরিচিত। লেভি হলো বিশেষ বিশেষ সময়ে আরোপিত জনগণের নিকট থেকে আদায়কৃত বিশেষ ধরনের রাজস্ব, যেমন পদ্মা সেতু সংশ্লিষ্ট রাজস্ব।
১০. ভাড়া ও ইজারা সরকারি সম্পত্তি ভাড়া ও ইজারা নেওয়ার মাধ্যমেও সরকার আয় করে।
১১. জরিমানা, দণ্ড ও বাজেয়াপ্তকরণ জরিমানা, দণ্ড, বাজেয়াপ্তকরণ প্রভৃতির মাধ্যমে সরকার প্রতি বছর অর্থ আয় করে থাকে।বাংলাদেশ সরকারের ব্যয়ের খাতসমূহ
বাংলাদেশ সরকার দেশের আর্থ-সামাজিক উন্নয়ন, ভৌত অবকাঠামো নির্মাণ, মানবসম্পদ উন্নয়ন ও দারিদ্র্য বিমোচনে বিপুল অর্থ ব্যয় করে থাকে। এছাড়া সরকারকে প্রশাসনিক, সামাজিক ও জনকল্যাণমূলক এবং অন্যান্য সেবাধর্মী কর্মকান্ডেও বায় করতে হয়। সরকারি ব্যয় ব্যবস্থাপনায় একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো উৎপাদনশীল খাতে ব্যয় বৃদ্ধি করা এবং অনুৎপাদনশীল খাতে ব্যয় নিয়ন্ত্রণে রাখা। সরকার দেশের বার্ষিক বাজেটে রাজস্ব ও উন্নয়নমূলক-এ দু'রকম ব্যয়ের জন্য অর্থ বরাদ্দ করে থাকে।
বাংলাদেশ সরকারের ব্যয়ের প্রধান খাতগুলো নিম্নে আলোচনা করা হলো
১. প্রতিরক্ষা প্রতিরক্ষা বাংলাদেশের সরকারি ব্যয়ের অন্যতম প্রধান খাত। প্রতিরক্ষা বাহিনীর কর্মকর্তা-কর্মচারীর বেতন, ভাতা ও অন্যান্য সুযোগ-সুবিধা প্রদান, যুদ্ধের অগ্রসর ও সাজসরঞ্জাম ক্রয় ইত্যাদি বাবল বাংলাদেশ সরকার প্রচুর অর্থ ব্যয় করে থাকে।
২. বেসামরিক প্রশাসন সরকার বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও এসবের বিভাগসমূহের পরিচালনা ও উন্নয়ন, কর্মচারীদের বেতন ভাতা ইত্যাদির জন্য উল্লেখযোগ্য পরিমাণ অর্থ ব্যয় করে।
৩. শিক্ষা বাংলাদেশ সরকারের বায়ের গুরুত্বপূর্ণ খাত হলো শিক্ষা। শিক্ষা সম্প্রসারণের মাধ্যমে দেশকে অশিক্ষার অভিশাপ থেকে মুক্ত করার লক্ষ্যে সরকারকে সাম্প্রতিককালে এ খাতে প্রচুর ব্যয় করতে হচ্ছে। সরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, বেসরকারি বিদ্যালয়, কলেজ, মাদরাসার জন্য অনুদান, উপবৃত্তি, বিনামূল্যে পাঠ্যপুস্তক প্রদান, শিক্ষক প্রশিক্ষণ ও শিক্ষা বিস্তারের নতুন নতুন কার্যক্রমে যথেষ্ট ব্যয় বৃদ্ধি পেয়েছে। এ ছাড়া উপানুষ্ঠানিক শিক্ষার জন্য সরকার উল্লেখযোগ্য পরিমাণ অর্থ ব্যয় করে।
৪. স্বাস্থ্য ও পরিবারকল্যাণ হাসপাতাল ও মেডিকেল কলেজ স্থাপন, বিভিন্ন সংক্রামক রোগ প্রতিরোধ, জনসংখ্যা
নিয়ন্ত্রণ, শিশুকল্যাণ কর্মসূচি, মাতৃস্বাস্থ্য কর্মসূচি প্রভৃতি খাতে সরকার প্রচুর অর্থ ব্যয় করে।
৫. ঋণ ও সুদ পরিশোধ দেশের উন্নয়নমূলক কাজের জন্য সরকারকে
একক। বাংলাদেশ সরকারের বারের দেশের অভ্যন্তর হতে এবং বিদেশ হতে প্রচুর পরিমাণে ঋণগ্রহণ করতে খাতসমূহ চিহ্নিত কর। হয়। এসব ঋণের আসল ও সুদ পরিশোধ বাবদ সরকারকে প্রতিবছর একক বাংলাদেশ সরকারের অপ্রত্যাশিত প্রচুর পরিমাণ অর্থ ব্যয় করতে হয়।
৬. কৃষি, মৎস্য ও পশু পালন : বাংলাদেশ সরকার এই খাতসমূহে প্রতিবছর উল্লেখযোগ্য পরিমাণ অর্থ ব্যয় করে থাকে।
৭. পুলিশ, আনসার ও বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ দেশের অভ্যন্তরীণ আইনশৃঙ্খলা রক্ষা ও শান্তি বজায় রাখার জন্য পুলিশ ও আনসার বাহিনী অপরিহার্য। আবার সীমান্ত রক্ষা ও চোরাচালান রোধের জন্য বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ গড়ে তোলা হয়েছে। এই তিন বৃহৎ বাহিনীর জন্য বাংলাদেশ সরকার প্রচুর অর্থ ব্যয় করে।
৮. বিচার বিভাগ ও কারা বিভাগ বিচার বিভাগ ও কারা বিভাগের কর্মকর্তা কর্মচারীর বেতন-ভাতা এবং এই দুই বিভাগের ব্যবস্থাপনায় প্রচুর অর্থ ব্যয় করতে হয়।
৯. রাজস্ব আদায়কারী বিভাগসমূহ : বাংলাদেশ সরকার আয়কর বিভাগ, বাণিজ্য শুল্ক বিভাগ, আবগারি শুল্ক বিভাগ, ভূমি রাজস্ব বিভাগ প্রভৃতির ব্যয়তার মেটানোর জন্য রাজ্যের এক বিরাট অংশ বায় করে।
১০. বৈদেশিক বিষয়াবলি : বিদেশের সাথে সম্পর্ক স্থাপন, বহির্বিশ্বে দেশের ও জনগণের স্বার্থ রক্ষার জন্য দূতাবাস প্রতিষ্ঠা ও পরিচালনার জন্য সরকারকে প্রতিবছর প্রচুর অর্থ ব্যয় করতে হয়।
১১. অবসর ভাতা ও অন্যান্য সুবিধা সরকারকে অবসরপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের অবসর ভাতা ও অন্যান্য সুবিধা প্রদানের জন্য প্রতিবছর প্রচুর অর্থ ব্যয় করতে হয়।
১২. সমাজ কল্যাণমূলক কার্যক্রম : সরকারকে প্রতি বছর সমাজকল্যাণমূলক কার্যক্রমের জন্য প্রচুর অর্থ বরাদ্দ রাখতে হয়।
১৩. অপ্রত্যাশিত ব্যয় : বন্যা, ঘূর্ণিঝড়, খরা, জলোচ্ছ্বাস, মহামারি ইত্যাদি প্রাকৃতিক দুর্যোগ ও তৎসৃষ্ট জরুরি অবস্থা মোকাবিলার জন্য প্রতিবছর বাংলাদেশ সরকারকে যথেষ্ট অর্থ ব্যয় করতে হয়।
১৪. অন্যান্য খাত : উপরের উল্লিখিত খাত ছাড়াও সরকার অন্য যেসব খাতে অর্থ ব্যয় করে থাকে তা হলো- সচিবালয়, হিসাব নিরীক্ষা, জ্বালানি ও শক্তি, ধ্বনি উৎপাদন এবং নির্মাণ প্রভৃতি।
বাংলাদেশ সরকারকে প্রতি বছরই উপরোক্ত খাতে প্রচুর পরিমাণে অর্থ ব্যয় করতে হয়। অনেক নতুন নতুন খাত ও ব্যায়ের পরিমাণ প্রতি বছর ক্রমশই বাড়ছে। তবে দেশের সমষ্টিক উন্নয়নের স্বার্থে সরকারি ব্যয় বৃদ্ধির পরিধি নিয়ন্ত্রণ করা উচিত।
ব্যাংকের ধারণা
ব্যাংক হলো জনসাধারণের অর্থ গচ্ছিত রাখার এবং ঋণ গ্রহীতাদের বিভিন্ন মেয়াদি ঋণ প্রদান করার প্রতিষ্ঠান। অর্থনৈতিক উন্নয়নে ব্যাংকের ভূমিকা গুরুত্বপূর্ণ। জনসাধারণ তাদের আয় বা উদ্বৃত্ত অর্থ নিরাপদে সঞ্চয়ের জন্য ব্যাংকে জমা রাখে। কোনো কোনো জমাকৃত অর্থ থেকে জনসাধারণ সুদ হিসেবে আয়ও করে থাকে। ব্যাংক জনসাধারণের এই গচ্ছিত অর্থ উদ্যোক্তা, উৎপাদনকারী, ব্যবসায়ী ও ঋণ গ্রহীতাদের ঋণ হিসেবে প্রদান করে এবং এ ধরনের ঋণের ওপর সুদ আদায় করে। সঞ্চিত অর্থের ওপর ব্যাংক যে সুদ দেয় তা ঋণ গ্রহীতাদের নিকট হতে ব্যাংক যে সুদ নেয় তার চেয়ে কম। সুদের হারের এই পার্থক্যই ব্যাংকের মুনাফা। মূলত এই মুনাফার ওপর ভিত্তি করে ব্যাংক টিকে থাকে। এ কারণে ব্যাংককে ঋণের কারবারি বলা হয়।
ব্যাংকের শ্রেণিবিভাগ
উদ্দেশ্য ও কার্যাবলির ভিত্তিতে ব্যাংকসমূহকে প্রধানত তিন শ্রেণিতে ভাগ করা হয়েছে।
কেন্দ্রীয় ব্যাংক : কেন্দ্রীয় ব্যাংক একটি দেশের সর্বোচ্চ আর্থিক প্রতিষ্ঠান। এই ব্যাংক দেশের অর্ধ-বাজার, মুদ্রাব্যবস্থা এবং অন্যান্য ব্যাংকসমূহকে তত্ত্বাবধান ও নিয়ন্ত্রণ করে। দেশের সার্বিক ব্যাংক ব্যবস্থাকে নিয়ন্ত্রণ করে বলেই এর নাম কেন্দ্রীয় ব্যাংক। দেশের কাগজি মুদ্রা প্রচলনের একমাত্র অধিকার রয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের। বাংলাদেশের কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নাম বাংলাদেশ ব্যাংক। এই ব্যাংক সরকারের প্রতিনিধি ও আর্থিক পরামর্শদাতা হিসেবেও কাজ করে।
বাণিজ্যিক ব্যাংক বাণিজ্যিক ব্যাংকসমূহ বাণিজ্যিক লাভের উদ্দেশ্যে স্বল্পমেয়াদি ঋণ প্রদান করে থাকে। বাংলাদেশে বহু বাণিজ্যিক ব্যাংক রয়েছে, যেমন- সোনালী ব্যাংক লিমিটেড, জনতা ব্যাংক লিমিটেড, অগ্রণী ব্যাংক লিমিটেড, রূপালী ব্যাংক লিমিটেড, উত্তরা ব্যাংক লিমিটেড, পূবালী ব্যাংক লিমিটেড, ন্যাশনাল ব্যাংক লিমিটেড, সিটি ব্যাংক লিমিটেড, ইসলামী ব্যাংক লিমিটেড প্রভৃতি বিশেষ আর্থিক প্রতিষ্ঠান।
বিশেষ লক্ষ্য অর্জনে আমাদের দেশে কতিপয় ব্যাংক প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। এ ব্যাংকসমূহকে বলা হয় বিশেষ আর্থিক প্রতিষ্ঠান, যেমন- শিল্প উন্নয়নের জন্য শিল্প ব্যাংক, কৃষি উন্নয়নের জন্য কৃষি ব্যাংক, গৃহনির্মাণ ঋণ মঞ্জুরির জন্য গৃহ নির্মাণ ঋণদান সংস্থা, সমবায় কার্যক্রমে ঋণদান ও জনগণকে সমবায়ী মনোভাব সম্পন্ন করার লক্ষ্যে সমবায় ব্যাংক, দরিদ্র জনসাধারণকে ক্ষুদ্র ঋণ প্রদানের লক্ষ্যে গ্রামীণ ব্যাংক প্রভৃতি।
বাণিজ্যিক ব্যাংকের কার্যাবলি
অর্থনীতিতে বাণিজ্যিক ব্যাংকের ভূমিকা গুরুত্বপূর্ণ। ব্যবসায় বাণিজ্যের প্রাণই হলো এই বাণিজ্যিক ব্যাংক। এই শ্রেণির ব্যাংকসমূহ বিভিন্ন কার্যক্রম পরিচালনা করে অর্থনীতিতে উন্নয়নে সহায়তা করে। বাণিজ্যিক ব্যাংকের অন্যতম প্রধান কাজ হলো জনসাধারণের কাছ থেকে আমানত গ্রহণ করা। ব্যাংকের আমানত সাধারণত তিন প্রকারের-চলতি, সঞ্চয়ী এবং স্থায়ী আমানত। চলতি আমানতের গচ্ছিত অর্থ যে কোনো সময় তোলা যায়। এই আমানতের জন্য ব্যাংক আমানতকারীকে কোনো সুদ প্রদান করে না। সঞ্চয়ী আমানত থেকে সপ্তাহে এক বা দুইবার অর্থ উত্তোলন করা যায়। এজন্য ব্যাংক আমানতকারীকে অল্প সুদ প্রদান করে। আর যে আমানত একটি নির্দিষ্ট সময় অতিক্রান্ত হবার পর তোলা যায় তাকে স্থায়ী আমানত বলে। স্থায়ী আমানতের জন্য আমানতকারীকে উচ্চ হারে সুদ প্রদান করা হয়। ঋণ প্রদান বাণিজ্যিক ব্যাংকের আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ কাজ। জনসাধারণের কাছ থেকে গৃহীত অর্থের একটি নির্দিষ্ট অংশ গচ্ছিত রেখে অবশিষ্ট অর্থ ব্যাংক ক্ষেত্রে সাধারণত মূল্যবান সম্পত্তি কখক রেখে এ কার্যক্রম পরিচালনা করে। বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলো প্রধানত স্বল্পমেয়াদি ঋণদান করে। কিন্তু বর্তমানে চাহিদার পরিপ্রেক্ষিতে মধ্যমেয়াদি ও ক্ষেত্রবিশেষ দীর্ঘমেয়াদি ঋণও দিয়ে থাকে। বিনিময়ের মাধ্যম সৃষ্টি করা বাণিজ্যিক ব্যাংকের অন্যতম কাজ। কাগজি নোট প্রচলন করার ক্ষমতা কেবল কেন্দ্রীয় ব্যাংকের থাকলেও বাণিজ্যিক ব্যাংকসমূহ চেক, ব্যাংক ড্রাফট, রুন্ডি, ভ্রমণকারীর ঋণপত্র ইত্যাদি বিনিময়ের মাধ্যম সৃষ্টি করে। উন্নত দেশগুলোতে অধিকাংশ লেনদেনই এসব বিনিময়ের মাধ্যমের সাহায্যে সম্পন্ন হয়ে থাকে।
বাটা (Discount) ধার্য করে বিনিময় বিল ভাঙ্গিয়ে দেওয়া বাণিজ্যিক ব্যাংকের আর একটি গুরুত্বপূর্ণ কাজ। মেয়াদ উত্তীর্ণ হওয়ার পূর্বেই টাকার প্রয়োজন হলে বিনিময় বিলের মাণিক বাণিজ্যিক ব্যাংক থেকে উক্ত বিল ভাঙ্গিয়ে নগদ টাকা পেতে পারে। এ কাজে ব্যাংক প্রচুর মুনাফা অর্জন করে। বাণিজ্যিক ব্যাংক অভ্যন্তরীণ ও বৈদেশিক বাণিজ্যের ক্ষেত্রে ক্রেতা-বিক্রেতাদের দেনা-পাওনা নিষ্পত্তিতে সাহায্য করে। বাণিজ্যিক ব্যাংকের মাধ্যমেই বৈদেশিক বাণিজ্যের অধিকাংশ কাজ পরিচালিত হয়।
বাণিজ্যিক ব্যাংক নিরাপদে এবং দ্রুত টাকা স্থানান্তর করে। এসব ব্যাংক চেক, ব্যাংক ড্রাফট, পে-অর্ডার, ভ্রমণকারীর চেক, টেলিগ্রাফিক ট্রান্সফার (টিটি) প্রভৃতি উপায়ে এক স্থান থেকে অন্য স্থানে অর্থ প্রেরণে জনগণকে সহায়তা করে।বাণিজ্যিক ব্যাংক পূর্বোক্ত কার্যাবলি ছাড়াও এর গ্রাহকের সুবিধার্থে তাদের প্রতিনিধি হিসেবে অরও অনেক কাজ সম্পাদন করে, যেমন- বন্ড, স্টক, শেয়ার, ডিবেঞ্চার ভয়-বিক্রয় ইত্যাদি। তাছাড়া গ্রাহকদের বাড়িভাড়া, আয়কর বিমার প্রিমিয়াম, টেলিফোন ও বিদ্যুৎ বিল প্রভৃতি পরিশোধে সহায়তা করে। মূল্যবান অলংকার, দলিলপত্র প্রভৃতি ও নিরাপদে গচ্ছিত রাখে।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কার্যাবলি
দেশের কাগজি মুদ্রার প্রচলন ও মুদ্রা ব্যবস্থা স্থিতিশীল রাখা কেন্দ্রীয় ব্যাংকের গুরুত্বপূর্ণ কাজ। কেন্দ্রীয় ব্যাংক কর্তৃক ইস্যুকৃত মুদ্রাই দেশের 'বিহিত মুদ্রা'। এ মুদ্রার অভ্যন্তরীণ ও বহির্মূল্য যাতে স্থিতিশীল থাকে তার দায়িত্ব কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ওপর ন্যস্ত থাকে। কেন্দ্রীয় ব্যাংক মূলত সরকারের ব্যাংক। সরকারের প্রতিনিধি হিসেবে এ ব্যাংক বিনা খরচে বিভিন্ন উৎস থেকে সরকারের পাওনা আদায় এবং বিভিন্ন খাতে সরকারের সেনা পরিশোধ করে।
কেন্দ্রীয় ব্যাংক সরকারের অভ্যন্তরীণ ও বৈদেশিক ঋণের হিসাব-নিকাশ ও ব্যবস্থাপনার দায়িত্ব পালন করে। এব্যাংক সুদ ছাড়া সরকারের অর্থ জমা রাখে এবং প্রয়োজনবোধে সরকারকে ঋণ প্রদান ও আর্থিক ব্যাপারে পরামর্শ দান করে। কেন্দ্রীয় ব্যাংক হলো সকল ব্যাংকের ব্যাংক। অন্যান্য ব্যাংককে তাদের মূলধনের নির্দিষ্ট অংশ কেন্দ্রীয় ব্যাংকে জমা রাখতে হয়। কেন্দ্রীয় ব্যাংক এই ঋন নিয়ন্ত্রণ করতে সক্ষম হয়। ঋণ নিয়ন্ত্রণ করা কেন্দ্রীয় ব্যাকের অন্যতম প্রধান কাজ। বাণিজ্যিক ব্যাংক কর্তৃক প্রদত্ত ঋণ দেশের মোট মুদ্রার জোগানের অন্তর্ভুক্ত। অতিরিক্ত ঋণ সৃষ্টির কারণে মোট অর্থের পরিমাণ যদি বেড়ে যায়, তাহলে দেশে মুদ্রাস্ফীতি দেখা দিতে পারে। কেন্দ্রীয় ব্যাংক দেশের মোট মুদ্রার চাহিদা ও জোগানের মধ্যে যথাসম্ভব সমতা বিধান করে স্থিতিশীলতা বজায় রাখার চেষ্টা করে। মুদ্রা সংকোচন ও মুদ্রাস্ফীতি এড়ানোর লক্ষ্যে এই ব্যাংক ঋণ নিয়ন্ত্রণের বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণ করে। বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলো যখন আর্থিক সংকটের সম্মুখীন হয় এবং অন্য কোনো উৎস থেকে ঋণ গ্রহণে ব্যর্থ হয়, তখন বাধ্য হয়ে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের শরণাপন্ন হয়। এমতাবস্থায় কেন্দ্রীয় ব্যাংকই বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোকে ঋণ প্রদান করে আর্থিক সংকটের হাত থেকে রক্ষা করে। এজন্য কেন্দ্রীয় ব্যাংককে সর্বশেষ পর্যায়ের ঋণদাতা বলা হয়। কেন্দ্রীয় ব্যাংক বিভিন্ন ব্যাংকের পারস্পরিক দেনা-পাওনার ক্লিয়ারিং হাউজ বা নিকাশ ঘর হিসেবে দায়িত্ব পালন করে। দৈনন্দিন ব্যবসা-বাণিজ্য সংক্রান্ত চেক আদান-প্রদানের ফলে বাণিজ্যিক ব্যাংকসমূহের মধ্যে দেনা-পাওনার সৃষ্টি হয়।
কেন্দ্রীয় ব্যাংক বিভিন্ন ব্যাংকের মধ্যে চেকের মাধ্যমে আন্তঃব্যাংক দেনা-পাওনা মিটিয়ে থাকে। কেন্দ্রীয় ব্যাংক অন্যান্য দেশের মুদ্রার সাথে দেশের মুদ্রার নির্দিষ্ট বিনিময় হার রক্ষা করে। এ উদ্দেশ্যে কেন্দ্রীয় ব্যাংক বৈদেশিক মুদ্রা ক্রয়-বিক্রয় করে। দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নের জন্য গবেষণা পরিচালনা, প্রয়োজনীয় তথ্য সংগ্রহ, জাতীয় বাজেট প্রণয়নে সাহায্য করা প্রভৃতি বিষয়েও কেন্দ্রীয় ব্যাংক কাজ করে থাকে।
উপর্যুক্ত কাজ ব্যতীত কেন্দ্রীয় ব্যাংক আরও কতকগুলো কাজ সম্পন্ন করে থাকে, যেমন- নিজ দেশে আন্তর্জাতিক মুদ্রা ভাঙার ও বিশ্বব্যাংকের প্রতিনিধি হিসেবে কাজ করা, স্বর্ণ, রৌপ্য মূল্যবান ধাতু ও উপার্জিত বৈদেশিক মুদ্রা সরক্ষণ করা প্রভৃতি।দারিদ্র্য বিমোচন ও স্বকর্মসংস্থানে বিভিন্ন ব্যাংকের ভূমিকা স্বকর্মসংস্থান বলতে বোঝায় স্বাধীনভাবে একজন কর্মক্ষম ও কর্মে ইচ্ছুক মানুষ বেকারত্বের অভিশাপ থেকে মুক্ত হওয়ার লক্ষ্যে নিজ উদ্যোগে উৎপাদন বা আয় অর্জনের ক্ষেত্রে নিয়োজিত থাকা। বাংলাদেশে প্রতিবছর শ্রমবাজারে প্রায় ২০ থেকে ২৫ লক্ষ নতুন কর্মক্ষম মানুষ প্রবেশ করছে। এসব মানুষের কর্মসংস্থান সৃষ্টি ও দারিদ্র্য বিমোচনে বিভিন্ন ব্যাংক গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে। নিম্নে এসব ব্যাংকের ভূমিকা আলোচনা করা হলো।
বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংক : স্বাধীনতা লাভের পরপরই বাংলাদেশে অবস্থিত সাবেক কৃষি উন্নয়ন ব্যাংকের সকল দায় ও সম্পদ নিয়ে বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংক গঠিত হয়। দারিদ্র্য বিমোচন ও কর্মসংস্থান সৃষ্টিতে এই ব্যাংকের রয়েছে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা। বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংক কৃষির উৎপাদন বৃদ্ধির জন্য কৃষকদের সময়, মধ্যম ও দীর্ঘমেয়াদি ঋণ প্রদান করে থাকে। হালের বলদ, বীজ, সার, কৃষি যন্ত্রপাতি ক্রয়, পানি সেচের জন্য শক্তিচালিত পাম্প, গভীর ও অগভীর নলকূপ স্থাপন প্রভৃতি কাজের জন্য কৃষি ব্যাংক ঋণ প্রদান করে। বর্তমানে কৃষি কার্য ছাড়াও হাঁস-মুরগি ও পশু পালন, মৎস্য উৎপাদন, গুটি পোকার চাষ, ফলের চাষ, ফুলের চাষ ও কুটির শিল্পের জন্যও এই ব্যাংক ঋণ প্রদান করে থাকে। বাংলাদেশে কৃষি ব্যাংক ছাড়াও সোনালী ব্যাংক, অগ্রণী ব্যাংক, জনতা ব্যাংক, রাজশাহী কৃষি উন্নয়ন ব্যাংক ও রূপালী ব্যাংকসমূহের সব সব বার্ষিক কৃষি ও পল্লী ঋণ কর্মসূচিতে স্বকর্ম সংস্থান ও আয়বর্ধক কর্মকাণ্ডের মাধ্যমে দারিদ্র নিরসনের লক্ষ্যে ক্ষুদ্র ঋণদান কর্মসূচি যথাযথ গুরুত্বের সাথে অন্তর্ভুক্ত করা হয়ে থাকে। কৃষি ও পল্লী ঋণ খাতে এসব ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানসমূহের বার্ষিক ঋণ বিতরণ লক্ষ্যমাত্রার ন্যূনতম শতকরা ২৫ ভাগ দারিদ্র্য বিমোচনের জন্য নির্ধারিত রাখতে হয়। বেসরকারি সংস্থাসহ বিভিন্ন সংস্থার মাধ্যমে এ ঋণ সরবরাহ করা হয়। এক্ষেত্রে ব্যাংকসমূহের নিজস্ব কর্মসূচি রয়েছে।
গ্রামীণ ব্যাংক : গ্রামীণ ব্যাংক একটি ব্যতিক্রমধর্মী ব্যাংক হিসেবে বাংলাদেশে আত্মপ্রকাশ করেছে। এটি পল্লীর ভূমিহীন নারী ও পুরুষদের ঋণদানের জন্য একটি বিশেষ অর্থলগ্নিকারী প্রতিষ্ঠান। ক্ষুদ্র ঋণ প্রদানকারী ব্যাংক হিসেবেও এটি পরিচিত। গ্রামীণ ব্যাংক বাংলাদেশের দরিদ্র পুরুষ ও নারীদের বিনা জামানতে ব্যাংকিং সুবিধা প্রদান করে। গ্রামীণ মহাজনদের শোষণ থেকে গরিব মানুষকে রক্ষা করার মহান ব্রত নিয়েই এ ব্যাংকের অগ্রযাত্রা। এ ব্যাংক গ্রামের বিশাল বেকার জনগোষ্ঠীর জন্য সবকর্ম-সংস্থানের সুযোগ সৃষ্টিতে ভূমিকা রাখছে।
Read more